রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের ৮ নেতাসহ ১০ জনের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৫ কোটি টাকার ‘সন্দেহজন’ লেনদেন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এই ১০ নেতারা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সহ-সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম মোর্শেদ খান, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল, এম মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
সোমবার দুদকের উপ-পরিচালক ঋত্বিক সাহা স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
চিঠিতে অভিযোগ সম্পর্কে বলা হয়, ‘৩০ দিনে তাদের একাউন্ট থেকে মানিলন্ডারিং ও সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে ১২৫ কোটি টাকা লেনদেনসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ।’
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির ওই নেতারা বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ‘বিদেশে টাকা পাচারসহ বিভিন্ন নাশকতায়’ অর্থ লেনদেন করে যাচ্ছেন বলে একটি অভিযোগ দুদকে এসেছে। সেই অভিযোগ অনুসন্ধান করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩০ দিনে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। নাশকতার জন্যই এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বিএনপির আট নেতার অ্যাকাউন্ট থেকে সন্দেহজনক এই অর্থ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।
এর মধ্যে আব্দুল আউয়াল মিন্টুর এইচএসবিসির অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি তিন চেকের মাধ্যমে মোট ১১ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। তিনটিই ক্যাশ চেক। ৩ কোটি ৭৫ লাখ এবং ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার দুটি চেক ঢাকায় নগদায়ন করা হলেও তৃতীয় চেকটি উত্তোলন করা হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে।
১৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে নগদে দুটি চেকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এর্ একটি চেক নগদায়ন করা হয় কুমিল্লা থেকে।
২০ ফেব্রুয়ারি আব্দুল আউয়াল মিন্টু ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক থেকে তিনটি চেকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। এর মধ্যে ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক নগদায়ন করা হয় খুলনা থেকে।
২৫ ফেব্রুযারি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর এইচএসবিসি অ্যাকাউন্ট থেকে আবারও দুটি চেকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৬০ লাখ উত্তোলন করেন।
আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ারের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি তাবিথ আউয়ালের ন্যাশনাল ব্যাংকের অ্যাকউন্ট থেকে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি একই ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয় ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দুটি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করা এই টাকার মধ্যে ৩ কোটি ২৫ লাখ উত্তোলন করা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে।
এদিকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেতা মোর্শদ খানের আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকউন্ট থেকে চারটি চেকের মাধ্যমে ১৮ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে চারটি চেকের মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা উত্তোলন হয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে।
২৬ ফেব্রুয়ারি মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খানের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৯ কোটি টাকা চারটি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন হয়।
গত ৩ মার্চ থেকে ১২ মার্চের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ডাচ বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২টি চেকের মাধ্যমে ২১ কোটি টকা উত্তোলন করা হয়েছে।
২৮ ফেব্রুয়ারি মির্জা আব্বাসের ঢাকা ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ কোটি ৫০ লাখ এবং ৪ মার্চ আরো ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা নগদায়ন করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মির্জা আব্বাস ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে আঁতাত করে বিভিন্ন অবৈধ লেনেদেসহ মানিলন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত।
অন্যদিকে নজরুল ইসলাম খান ও হাবিব-উন-নবী সোহেলের অ্যাকাউন্ট থেকে গত দুই সপ্তাহে ৭ কোটি উত্তোলন করা হয়েছে। এর আগে ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি নেতাদের দ্বারা নাশকতা ও অরাজকতা সৃাষ্টর আগে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক ও নগদ অর্থ লেনদেনের ঠিক একইরকম তথ্য পাওয়া যায় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন। বিএনপি নেতাদের সবার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগও অনুসন্ধান করবে দুদকের এই অনুসন্ধান দল।